শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৪ অপরাহ্ন
বাংলা ট্রিবিউন : করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে সীমিত পরিসরে পরিচালিত হচ্ছিল হাইকোর্টের কার্যক্রম। এই সময়ে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার দুই মামলার হাইকোর্টে বিচার শুরু করা যায়নি। তবে ভার্চুয়াল আদালত খুলে যাওয়ার পরপরই মামলা দুটির শুনানিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এরইমধ্যে মামলার শুনানির পূর্বকার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। ফলে যেকোনও সময় শুনানির জন্য উঠছে মামলার ২০ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক।
মামলার বিবরণী থেকে জানা গেছে, সারাদেশে জঙ্গিদের বোমা হামলা এবং গোপালগঞ্জে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকালে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশের প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে বিকাল ৫টায় পৌঁছান। একটি ট্রাকের ওপর তৈরি মঞ্চে তিনি ২০ মিনিটের বক্তৃতা শেষে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করার ঘোষণা দেন। এরপর শেখ হাসিনা মঞ্চ থেকে নিচে নেমে আসতে থাকেন। ঠিক এমন সময় শুরু হয় মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা। মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে বিস্ফোরিত হয় ১১টি শক্তিশালী গ্রেনেড। এতে ঘটনাস্থলেই মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আর আহত হন কয়েকশ নেতাকর্মী। সেদিন নেতাকর্মীদের কঠোর বলয়ের কারণে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে যান। তবে গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার শ্রবণশক্তি।
অনেক নাটকীয়তা পার করে ওই হামলার ঘটনায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ষড়যন্ত্র ও এ ঘটনায় সহায়তাসহ বিভিন্ন অভিযোগে হত্যা এবং বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনে মোট দুটি মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘদিনের বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন মামলা দুটির রায় ঘোষণা করেন।
সেই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া রায়ে তিন সাবেক আইজিপিসহ ১১ সরকারি কর্মকর্তার বিভিন্ন মেয়াদের লঘুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন আদালত।
এরপর ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর আসামিদের জেল আপিল ও ডেথ রেফারেন্স সংবলিত প্রায় ৩৭ হাজার ৩৮৫ পৃষ্ঠার নথি হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়। এরপর ২০১৯ সালের ১৩ জানুয়ারি উচ্চ আদালত মামলাটি শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুতের আদেশ দেন।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্যমতে, একুশে আগস্টের ঘটনায় করা মামলা দুটিতে মোট ৬৩টি আপিল দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ১৩টি ভলিউমে মোট ৫৮৫টি পেপারবুক তৈরি করা হয়েছে। যার পৃষ্ঠা সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার ৫০০। এসব পেপারবুকে ২২টি আপিল এবং ১২টি জেল আপিল রয়েছে। পাশাপাশি একই ঘটনায় দায়ের হওয়া বিস্ফোরক মামলায় ১১টি ভলিউমে মোট ৪৯৫টি পেপারবুক তৈরি করা হয়েছে। যার পৃষ্ঠা সংখ্যাও প্রায় ১০ হাজার। এসব পেপারবুকে ১৭টি আপিল এবং ১২টি জেল আপিল রয়েছে।
সূত্র জানায়, অনেক আগে থেকেই পেপারবুক শুনানির জন্য বিজি প্রেস থেকে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে জমা পড়ে আছে। এরপর নিয়ম অনুসারে পেপারবুকের প্রুফ দেখা শেষ হয়েছে। যার প্রতিটি পৃষ্ঠা সতর্কতার সঙ্গে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। ফলে পেপারবুক প্রস্তুতের সব কার্যক্রম শেষ। এখন শুধু শুনানির জন্য অপেক্ষা।
দীর্ঘদিন পর আদালত খুলে যাওয়ায় মামলা দুটির শুনানিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, করোনার পর ভার্চুয়ালি আদালত খুলেছে। মামলার পেপারবুকও পুরোদমে প্রস্তুত আছে। এখন আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলা দুটির ওপর হাইকোর্টে শুনানি শুরু করতে চাই। শিগগিরই এ মামলার শুনানির অপেক্ষার অবসান ঘটবে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply